•   Saturday, 27 Jul, 2024

লোডশেডিংয়ের বিকল্প হতে পারে সৌর বিদ্যুৎ

Generic placeholder image
  News Admin

নিজস্ব প্রতিবেদক (প্র.বার্তা): বৈষয়িক কারনে গ্যাস ও জ্বালানী সংকট থেকে বাঁচতে আগাম সতর্কতা হিসেবে লোডশেডিং করা হচ্ছে বাংলাদেশে। কিন্তু যদি বিকল্প জ্বালানী উৎস থেকে আমরা বিদ্যুত পাই তাহলে এমনেতিই গ্যাস কয়লা নির্ভর খাতের বাইরেও আমরা বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারি। গ্যাস কয়লার উত্তম বিকল্প হলো সৌর বিদ্যুৎ। সূর্যের তাপকে কাজে লাগিয়ে আমরা বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি। এই প্রযুক্তিটি আমাদের দেশে পরিক্ষিত ও প্রমানিত। এবং সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে আমরা লোডশেডিং অনেকাংশে নিয়ন্ত্রনে বা সহনীয় মাত্রায় আনতে পারি।

সূর্য শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ অফুরন্ত উৎপন্ন করতে পারি। আধুনিক যুগে সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার জন্য যে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা হয় তার নাম সোলার প্যানেল। একটি সোলার প্যানেল এমন একটি যন্ত্র যা পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সূর্যের শক্তি ক্যাপচার করে। এই প্লেটগুলো বিকিরণকে তাপ বা ফটোভোলটাইক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে ।

সোলার প্যানেলের মাধ্যমে কৃষিকাজ, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, বাড়ি-গাড়ি, ক্যালকুলেটর, হাত ঘড়ি, বৈদ্যুতিক বাতি, মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইট ইত্যাদি সবকিছুই সূর্য থেকে পাওয়ার নিয়ে কাজ করে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মতো চরম সমস্যা থেকে বাঁচতে সৌর বিদ্যুৎ সত্যিই অনেক কার্যকরী উপায়। তাছাড়া আমাদের দেশের বিদ্যুৎতের যে অবস্থা, এতে নিজের ঘরেই বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা ভালো। সৌর বিদ্যুৎএর সবচাইতে ভালো ব্যাপার হলো এটি সম্পূর্ণ ফ্রী আর সেটআপ করতেও তেমন টাকা লাগে না। ঘরের ছাদে বা বাহিরে চাহিদা অনুসারে সোলার প্যানেল লাগানো থাকে, এবং রাতে পাওয়ার ব্যাকআপ পাওয়ার জন্য রেগুলার ব্যাটারি লাগানো থাকে। ব্যাটারির সাথে একটি চার্জ কন্ট্রোলার লাগানো থাকে, কেনোনা ব্যাটারি যদি ওভার চার্জ না হয়, তবে সেটা অনেক ভালো ব্যাকআপ দিতে সক্ষম হয়। ব্যাটারি একবার ফুল চার্জ হয়ে গেলে কন্ট্রোলার আর পিভি মডিউল থেকে ব্যাটারিতে কারেন্ট প্রবাহিত করে না।

সোলার সেলের সাথে একটি প্রধান সমস্যা হচ্ছে, প্যানেল থেকে এবং ব্যাটারি থেকে যে বিদ্যুৎ সরাসরি আসে, সেটা ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট। কিন্তু বাড়ির টিভি, ফ্যানসহ প্রায় যেকোনো যন্ত্রপাতি চালাতে প্রয়োজন এসি বা অলটারনেটিং কারেন্ট। তাই একটি ইনভার্টার লাগানো থাকে যেটা ডিসি কে এসি তে রূপান্তরিত করে। বেশিরভার ইনভার্টার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে। তবে আজকের কিছু লেটেস্ট সোলার মডিউল যেটার নাম এসি মডিউল; যেখানে বিল্ডইনভাবে ইনভার্টার লাগানো থাকে। তাছাড়া বাইরে সোলার প্যানেলটি ঠিকঠাক মতো সূর্যের দিকে মুখ করে ইন্সটল করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আপনার বাড়িতে সম্পূর্ণ সৌর বিদ্যুৎ সিস্টেম সেটআপ করে নেওয়ার জন্য সোলার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা কোন লাইসেন্সধারী ইলেক্ট্রিশিয়ানের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। এতে আপনার কাজ পারফেক্ট হবে, সাথে সামনের ১৫-২০ বছর ফ্রীতে বিদ্যুৎ উপভোগ করতে পারবেন।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় তাদের ওয়েবসাইটে বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে সোলার বিদ্যুতের সুবিধা ও সম্ভাব্য খরচের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

 

সোলার বিদ্যুতের সুবিধাঃ

  • বিদ্যুৎ উৎপাদনে কখনো ঘটতি হবেনা কারণ সৌরশক্তি অপরিসীম।
  • প্যানেল স্থাপনের পর বিদ্যুতের কোন বিল দিতে হবে না।
  • বিদ্যুৎ ব্যবস্থা কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না।
  • সোলার প্যানেল রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব সহজ।
  • পরিবেশ দূষণ করেনা।
  • প্যানেলের দীর্ঘস্থায়িত্ব বেশী তাই অনেক বছর ব্যবহার করা যায়।
  • যেখানে পাওয়ার গ্রিড প্রসারিত ব্যয়বহুল, সেখানে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • দুই ধরনের প্যানেল রয়েছে
  • সৌর-তাপ প্যানেল ও ফটোভল্টাইক অথবা পিভি প্যানেল।
  • বাড়িতে যেভাবে সোলার প্যানেল বসাবেন

সোলার প্যানেল বসানোর জন্য এমন স্থান নির্ধারণ করতে হবে যেখানে দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের আলো পাওয়া যায়। সেজন্য জায়গাটি হতে হবে খোলামেলা এবং বড় বড় গাছ থেকে দূরে। এই ক্ষেত্রে বাড়ির ছাদই সবচেয়ে উত্তম স্থান। স্থান নির্ধারনের পর ধাতব কাঠামোর উপর আগে থেকে বসানো সোলার প্যানেলকে বিশেষ ভাবে তৈরি বেইজে বসাতে হবে। যেদিকে বশি সময় সূর্যের আলো পাওয়া যায় সেদিকে সোলার প্যানেলের সামনের অংশ রাখতে হবে। উত্তর গোলার্ধে সোলার প্যানেলকে দক্ষিণমুখী করে বসাতে হবে। তবে গ্রীষ্মকালে হেলানো কোনের পরিমাণ কম হলে ভাল। এজন্য সোলার প্যানেলকে প্রায় মাটির সমান্তরালে রাখতে হয়। আর শরৎ ও বসন্তকালে ভূমির অক্ষাংশের সমান কোণে কাত করে বসাতে হবে। এরপর সংযোগ তার দুটি মাটির ভিতর দিয়ে নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের সাথে সংযোগ করতে হবে। সংযোগ বাক্সে ব্যাটারি এবং চার্জ কন্ট্রোলার যথানিয়মে (প্যাকেটে উল্লেখিত নিয়ম) যুক্ত করতে হবে।

ইলেকট্রিসিটি বিল ইউনিট অনুযায়ী সোলার সিস্টেম লাগানো উচিত। ধরা যাক তিন মাসে কোন বাড়িতে ৪০০ ইউনিট রিডিং এসেছে। অর্থাৎ, সেই বাড়িতে একদিনে ৪.৫ ইউনিট কারেন্ট ব্যবহার হয়েছে। এইরকম বাড়িতে এক কিলো ওয়াট সোলার সিস্টেম যথেষ্ট। এর দ্বিগুণ কারেন্ট ব্যবহার হলে দুই কিলো ওয়াট সোলার সিস্টেম সেট করতে হবে। তবে ২ কিলোওয়াট এর বেশি সোলার সিস্টেম লাগাতে গেলে পিসিইউ প্রয়োজন হয়। কোন বাড়িতে হাফ হর্সপাওয়ারের পানি তোলার মোটর পাম্প লাগলে এক কিলো ওয়াট সোলার সিস্টেম ব্যবহৃত হয়।

পনেরো বা বিশ ওয়াটের এলইডি লাইট এবং বিশ ওয়াটের টিউব লাইট ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ অনেকটাই সাশ্রয় হয়। এগুলো সোলার প্যানেলের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপযোগী। যদি একসাথে সব কিছু সোলার নাও করতে চান সে ক্ষেত্রে বাড়ির কিছু কানেকশন সোলার করার কথা ভাবতে পারেন। তারপরে ধীরে ধীরে এগোতে পারেন। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় বাড়ির ছাদ, পতিত জমি, রেললাইনের পাশে ও বাড়ির জানালার পাশে সোলার প্যানেল বসাতে পারেন। সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব। বিদ্যুৎ সংকটের ভয়াবহ অবস্থা কমাতে সৌর বিদ্যুৎ বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

Comment As:

Comment (0)