•   Thursday, 21 Nov, 2024
জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র শেভরন

জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে কম্প্রেসর স্থাপনের কাজ স্থগিত করলো শেভরন

Generic placeholder image
  প্রকৌশল সমাচার অনলাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাসের বকেয়া বিল না পেয়ে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে কম্প্রেসর স্থাপনের কাজ স্থগিত করেছে মার্কিন কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। এরই মধ্যে বিষয়টি পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে তারা। এই প্রথম বিল বকেয়ার কারণে কোনো প্রকল্প স্থগিত করল শেভরন। এদিকে, শেভরনের চিঠি পাওয়ার পর বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। পাশাপাশি বকেয়া পরিশোধ করতে অর্থ বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা চলছে বলে জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিভাগ, পেট্রোবাংলার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললেও কেউ আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। শেভরন বাংলাদেশের কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান এ প্রসঙ্গে কালবেলাকে বলেন, সরকারের কাছে আমাদের বকেয়া দিন দিন বাড়ছে। আমরা গ্যাস বিক্রি করে যে লাভ করি, সেটাই ফের বিনিয়োগ করি। বকেয়ার পরিমাণ বেশি হওয়ায় জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে কম্প্রেসর স্থাপনের কাজটি আপাতত স্থগিত করেছি। আগামী বছর কাজটি করার কথা আমরা জানিয়েছি পেট্রোবাংলাকে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে শেভরনের গ্যাস বিক্রির বকেয়া ২২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। আর জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে কম্প্রেসর স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে মার্কিন এই কোম্পানিটির গ্যাসের বিল বকেয়া রয়েছে। গত ৪ এপ্রিল বকেয়া টাকা নিয়ে পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেয় শেভরন।

শেভরন ও পেট্রোবাংলার মধ্যে গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয় চুক্তি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি-পিএসসি) অনুযায়ী, গ্যাসের বিল পাঁচ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে উৎপাদন বন্ধ করার স্বাধীনতা রয়েছে শেভরনের। চুক্তির ১৪.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পেমেন্টের তারিখ থেকে পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে ক্রেতা যদি পেমেন্ট না করে তাহলে বিক্রেতা গ্যাস সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে না। এর আগে গত বছরের মে মাসে শেভরন গ্যাসের বিল দেওয়ার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় জরিমানা দাবি করেছিল। ওই সময় মোট ১১টি বিলের বিপরীতে ২৪ লাখ ১২ হাজার ৯৯১ দশমিক ১৯ মার্কিন ডলার জরিমানা দাবি করে। পেট্রোবাংলা অবশ্য এর আগে কখনো শেভরনের গ্যাসের বিল পরিশোধে খেলাপি হয়নি এবং জাতীয় গ্যাস গ্রিডে গ্যাস সরবরাহের এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করত। কিন্তু এখন ডলার সংকটের কারণে জ্বালানি খাতের বকেয়া বিল অনেক জমা পড়েছে।
জানা গেছে, জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বাড়াতে ২০২৫ সালের মধ্যে কম্প্রেসর স্থাপন করার কথা ছিল। প্রকল্পের কাজ স্থগিত হওয়ায় গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনাও থেমে গেল।
বর্তমানে শেভরন জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের সাতটি কূপ থেকে দৈনিক ১৪২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করছে। কম্প্রেসর স্থাপন করা হলে দৈনিক উৎপাদনের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শেভরন ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের হাইড্রোকার্বন খাতে বিনিয়োগ করছে। দেশের মোট গ্যাস উৎপাদনের ৬৩ শতাংশ সরবরাহ করে এই কোম্পানি। জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র ছাড়াও কোম্পানিটির হাতে রয়েছে সিলেটের বিবিয়ানা ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। এ তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ১৩শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে শেভরন। স্থলভাগের এই তিনটি ক্ষেত্র যথাক্রমে ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর ব্লকে অবস্থিত।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শেভরনের সরবরাহ করা গ্যাস দেশের লাইফ লাইন বলা যায়। সবচেয়ে বেশি গ্যাস তারাই দিচ্ছে। ২০২২ সালের এপ্রিলে বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে হঠাৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে সারা দেশে ভয়াবহ সংকট হয়। ফলে বিবিয়ানার গ্যাস দেশের জন্য অপরিহার্য। তাই এখানে কোনো সমস্যা তৈরি হলে সব খাতেই এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। গতকাল পেট্রোবাংলার গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ চিত্র থেকে জানা গেছে, চাহিদার বিপরীতে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৩৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৯৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা এলএনজি থেকে। বর্তমানে মোট চাহিদার ৮০ শতাংশ দেশে উৎপাদিত গ্যাস দিয়ে মেটানো হয়। বাকি ২০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। চলতি বছর সরকারের আমদানির পরিকল্পনায় রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় কাতার, ওমান থেকে ৫৬ কার্গো এলএনজি আমদানি। এর মধ্যে কাতার থেকে আসবে ৪০ কার্গো এবং ওমান থেকে ১৬ কার্গো। এ ছাড়া স্পট মার্কেট থেকে চলতি বছর ২৫ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে সরকার ১৩ কার্গো আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কার্গোপ্রতি এলএনজির ধারণক্ষমতা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারণ এরই মধ্যে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় বেশ কয়েকটি কোম্পানি এলএনজি সরবরাহে অপরাগতা জানিয়েছে। ফলে এসব অনিশ্চয়তার কারণে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

Comment As:

Comment (0)