•   Sunday, 08 Sep, 2024
বরিশালে প্লাস্টিক বোতলে তৈরী বাড়ি

প্লাস্টিক বোতলে তৈরী বাড়ি ইটের চেয়ে ৮০ ‍গুন শক্তিশালী, ভূমিকম্পরোধক ও বুলেট প্রুফ

Generic placeholder image
  News Admin

বাতিল মানেই ফেলনা নয়। পরিবেশের ক্ষতিকারক রঙবেরঙের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ভূমিকম্পরোধক ও বুলেট প্রুফ বাড়ি নির্মাণ করে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন এক দন্তচিকিৎসক। স্থানীয়দের কাছে বাড়িটি ‘বোতল বাড়ি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

পাঁচ কক্ষবিশিষ্ট এ বাড়িটির নির্মাণকাজ চলমান থাকতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।ছাদ ঢালাইয়ের কাজ বাকি থাকা বোতল বাড়িটি দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসুক মানুষ আসছে। স্বপ্নের এ বোতল বাড়িটি নির্মাণ করেছেন বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার রামানন্দের আঁক গ্রামের বাসিন্দা ও গৌরনদী মডেল থানা কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকার দন্তচিকিৎসক পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ।

 

স্থানীয় বাসিন্দা রণজিত মিস্ত্রি বলেন, শুরুতে পলাশের ইচ্ছের কথা শুনে এলাকাবাসী তেমনভাবে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি। শুধু দেখেছেন ট্রাকে করে পলাশ প্লাস্টিকের বোতল বাড়িতে আনছেন। এরপর সেই বোতলগুলোর মধ্যে লোক দিয়ে বালু ভরাচ্ছেন আর বলছেন, এ দিয়েই বাড়ি বানাবেন। কিন্তু কীভাবে বাড়ি হবে— তা তাদের মাথায় আসছিল না। একই গ্রামের স্বপন কুমার বলেন, প্রথমে বিষয়টি ভ্রুক্ষেপ না করলেও যখন অবকাঠামোটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে যেতে থাকে, তখন সবাই অবাক হয়েছে। সবার মনের ভেতরেই অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতে থাকে। আশপাশের সবাই এখন বোতল বাড়িটি দেখার মতো হয়েছে বলেই মন্তব্য করছেন। আশাপাশের হাট-বাজারেও বোতল বাড়ি নিয়ে এখন আলোচনা হচ্ছে।

পলাশের স্ত্রী জুঁই রানী দাশ বলেন, নির্মাণাধীন বোতল বাড়ি দেখতে আসা মানুষের কাছে স্বামী পলাশ চন্দ্র বাড়ৈর প্রশংসা শুনে বেশ ভালোই লাগছে। অভিনব পদ্ধতিতে বাড়ি নির্মাণের সাথে জড়িত থাকতে পেরে ব্যাপক খুশি রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকরা।

বোতল বাড়ি নির্মাণকাজের সাথে জড়িতরা বলেন, বাড়িটি নির্মাণে ইটের বদলে প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল আর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলগুলোর মধ্যে বালু ভরে তা ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনি তৈরিতে। ইতোমধ্যে ইটের বদলে প্লাস্টিকের বোতল দিয়েই বাড়ির দেয়ালের গাঁথুনির কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ির পাশের পুকুরঘাটও নির্মাণ করা হয়েছে বোতল দিয়ে।

রাজমিস্ত্রি মতি সিকদার বলেন, বিগত ১০ বছর ধরে আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। বোতল দিয়ে বাড়ি বানানো এটাই আমার জীবনের প্রথম কাজ। পলাশ ভাইয়ের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করি। কাজ যতদূর করা হয়েছে, তাতে নিশ্চিত বাড়ির নির্মাণকাজ খুবই মজবুত হয়েছে। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির তেমন কোনো ক্ষতি হবে না।

বোতল বাড়ি নির্মাণের উদ্যোক্তা পলাশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে এভাবে বাড়ি নির্মাণের প্রযুক্তিটা মূলত জাপানি। প্রযুক্তিটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। কারণ এ বাড়ির প্রতিটি দেয়াল শীতে গরম আর গরমে ঠাণ্ডা থাকবে। ফলে বাড়ির ভেতরটাও আবহাওয়া অনুযায়ী বসবাসের উপযোগী হবে। এছাড়া প্লাস্টিকের বোতলগুলো ফ্ল্যাক্সিবল হওয়ায় এটা ভূমিকম্পরোধক। পাশাপাশি দেয়ালগুলো বুলেট প্রুফ। আর বাড়িটি ইটের চেয়ে ৮০ গুণ বেশি শক্ত।

 

পাঁচকক্ষবিশিষ্ট বোতল বাড়িটি দোতলা করার ইচ্ছের কথা জানিয়ে দন্তচিকিৎসক পলাশ আরও বলেন, এসব বোতল ক্রয় করে বাড়িতে এনে তাতে বালু ভরে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু এই সমপরিমাণ জায়গায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ইটের প্রয়োজন হতো। সে হিসেবে আমার অর্ধেকের কম খরচ হয়েছে। ইট-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি পাকা বাড়ির চেয়ে অন্তত ৩০ শতাংশ কম খরচে স্বপ্নের এ বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব বলেও মনে করছেন পলাশ।

Comment As:

Comment (0)