কর দ্বিগুণ হওয়ায় ঢাকায় ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধনে ধস
ফ্ল্যাট ও জমি নিবন্ধনে কর বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। তাই ফ্ল্যাট ও জমি নিবন্ধনে আগ্রহ কমে গেছে ক্রেতাদের। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, শুধু ঢাকা শহরেই এ খাত থেকে আয়কর আদায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে গেছে। তার মানে, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন এক–তৃতীয়াংশ কমেছে। কারণ, এ বছর থেকে নিবন্ধন কর দ্বিগুণ হয়েছে।
বর্তমানে জমি নিবন্ধনের সময় চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ কর দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি এলাকার কাঠাপ্রতি ন্যূনতম মূল্য ধরা হয়েছে। এর ফলে জমির দাম আরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফ্ল্যাট নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ৮০০ টাকা বা চুক্তিমূল্যের ৮ শতাংশ—যেটি বেশি, সেটি কর হিসেবে দিতে হবে।গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, বারিধারা, ডিওএইচএস, উত্তরাসহ রাজধানী বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাট বেশি কেনাবেচা হয়। এ ছাড়া ঢাকা শহরের আশপাশে বিভিন্ন আবাসন প্রকল্পে বেশি জমি বা প্লট বিক্রি হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ও তার আশপাশের ১৭টি সরকারি নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি বা ফ্ল্যাট নিবন্ধন করা হয়। এসব নিবন্ধন কার্যালয়ে জমি ও ফ্ল্যাট নিবন্ধনের সময় এনবিআরের কর কেটে রাখা হয়। এনবিআর ওই ১৭টি কার্যালয় থেকে করের হিসাব নিয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, গত জুলাই মাসে মাত্র ৩২ কোটি টাকা নিবন্ধন কর পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে নিবন্ধন করের পরিমাণ ছিল ১০১ কোটি টাকা। গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে এ বছরের জুলাইয়ে নিবন্ধন বাবদ ৬৯ কোটি টাকা কম কর আদায় হয়েছে। আগস্ট মাসেও একই ধারা অব্যাহত আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৪ দিনে ৭৬ কোটি টাকা এসেছে। গত বছর আগস্টে সব মিলিয়ে ১২৬ কোটি টাকা কর পেয়েছিল এনবিআর।এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে নিবন্ধন কর আদায়ে লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। ১ মাস ২৪ দিনে আদায় হয়েছে ১০৮ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যের মাত্র সোয়া ২ শতাংশ। তাই বিষয়টি নিয়ে এনবিআরের নীতিনির্ধারকেরা চিন্তিত। এ জন্য প্রতি সপ্তাহেই এ খাতের কর আহরণের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর গড়ে ১০ হাজার ফ্ল্যাট হস্তান্তর হয়। এর মধ্যে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় ৮ হাজার ফ্ল্যাট বিক্রি হয়।
এ বিষয়ে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নতুন করহার চালুর পর ফ্ল্যাট নিবন্ধন নেই বললেই চলে। ফ্ল্যাট হস্তান্তরেও ধস নেমেছে। যখন এনবিআর করহার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন বলেছিলাম এটি করলে কর আদায় ৮০ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে। কর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সরকারের আবাসননীতিরও পরিপন্থী।