পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে ৫২ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক: উষ্ণায়ন মোকাবেলায় জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন এখন বড় একটি বৈশ্বিক এজেন্ডায় পরিণত করেছে। এ বিষয়ে উদ্ভাবনী সংস্থাগুলোর ক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। সব মিলিয়ে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাঁচ হাজারে এ খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৫২ শতাংশ। খবর-আনাদোলু।
২০১৯-২৩ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সক্ষমতা ৩ হাজার ৮৬৯ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে বলে সাম্প্রতিক ‘নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ পরিসংখ্যান ২০২৪’ প্রতিবেদনে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি (আইআরএনইএ)।
এছাড়া ২০২৩ সালে মোট বিদ্যুৎ সক্ষমতার তুলনায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের হিস্যা ৪৩ দশমিক ২ শতাংশে পৌঁছেছে। এ উৎপাদন সক্ষমতা ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের উৎসের ক্ষেত্রে সৌর ও বায়ুবিদ্যুৎ খাতে আগ্রহ ও বিনিয়োগ দিনদিন বাড়ছে। ২০১৯-২৩ সালের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে তুলনামূলক বেশি।
পাঁচ বছরে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১৩৮ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৪১৯ গিগাওয়াট হয়েছে। এর পরই রয়েছে বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো, এ খাতে ২০১৯ সালের তুলনায় ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। বৈশ্বিক বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে গত বছর মোট উৎপাদন ১ হাজার ১৭ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ বর্জ্য নির্ভর বায়োমাস বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। ২০১৯-২৩ পর্যন্ত এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ২০ শতাংশ বেড়ে ১৫০ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে। পিছিয়ে নেই ভূতাপীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও। গত বছর এসব প্রকল্প থেকে ১৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, যা ২০১৯ সাল থেকে ৭ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে পুরনো প্রযুক্তি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পরিবেশগতভাবে এ প্রযুক্তি কয়েক দশক ধরে সমালোচনার শিকার হয়ে আসছে। পাঁচ বছরে বৈশ্বিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ২৬৮ গিগাওয়াটে পৌঁছেছে।
বিদ্যুতের এ সক্ষমতার ক্ষেত্রে ছোট একটি পরিবর্তন এনেছে সামুদ্রিক শক্তি। এর আওতায় রয়েছে ঢেউ, জোয়ার-ভাটার গতি প্রকৃতি ও সামুদ্রিক বাতাস। এসব উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। ৫২৭ মেগাওয়াট সক্ষমতাসহ সামুদ্রিক এ প্রকল্পগুলোর অর্ধেক এশিয়ায় ও ৪৫ শতাংশ ইউরোপে অবস্থিত।
আইআরএনইএর প্রতিবেদন অনুসারে, পাঁচ বছরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতার সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি দেখা গেছে এশিয়ায় ৭৪ শতাংশ। এর পরই রয়েছে ওশেনিয়া দেশগুলো। এখানে বেড়েছে ৫৬ শতাংশ। ইউরোপীয় অঞ্চলে উৎপাদন বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। একই সময়ের মধ্যে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা উত্তর আমেরিকায় ৩৬ ও দক্ষিণ আমেরিকায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি দেখেছে আফ্রিকার এ খাতের প্রকল্পগুলো।
আইআরএনইএ জানিয়েছে, উল্লেখিত পাঁচ বছরে মোট অফ-গ্রিড নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষমতা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। যার পরিমাণ ১২ হাজার ৭৫৪ মেগাওয়াট।
গত বছরের ডিসেম্বরে দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত হয় জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন কপ২৮ শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে প্রায় ২০০টি দেশ জীবাশ্ম বিদ্যুৎ থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে রাজি হয়েছিল। জানুয়ারিতে এক প্রতিবেদনে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা বেড়েছে ৫০ শতাংশ। সঙ্গে পূর্বাভাস দিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়ানোর এ গতি আগামী পাঁচ বছর অব্যাহত থাকবে।
আইইএ জানিয়েছিল, ২০২৩ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা ৫১০ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া সোলার পিভি (সূর্যের আলোকে সরাসরি বিদ্যুতে রূপান্তর করার প্রযুক্তি) তিন-চতুর্থাংশ বেড়েছে।
নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে চীন। ২০২৩ সালে যে পরিমাণ সোলার পিভি ব্যবহার করেছে চীন, তা ২০২২ সালে পুরো বিশ্বে ব্যবহার হতো। এছাড়া চীনে বায়ুবিদ্যুতের ব্যবহার বার্ষিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর ইউরোপে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড করেছে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বায়ু ও সৌরবিদ্যুতের সরঞ্জামের দাম অপেক্ষাকৃত সস্তা। এর তুলনায় জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর নতুন ও পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি।
এদিকে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান কমিশন নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর আওতায় ২০৩০ সালের ইউরোপীয় ইউনিয়নে মোট সরবরাহে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা হলো ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ।
তবে বৈশ্বিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ডেভিড ফিকলিং জানিয়েছেন, উন্নত দেশগুলো নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ সক্ষমতা প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করলেও পিছিয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলো। সেক্ষেত্রে বড় জায়গা ধরে রেখেছে জীবাশ্ম জ্বালানি। বৈশ্বিক জ্বালানি তেল ও গ্যাস রফতানিকারক দেশগুলো নিজেদের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় জ্বালানি নীতিমালা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। অথচ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশের বসবাস এসব দেশে।