•   Friday, 18 Oct, 2024

বহুমাত্রিক যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে ড্যাপ

Generic placeholder image
  প্রকৌশল সমাচার ডেস্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক (প্র.বার্তা):

সড়ক, রেল ও নৌপথের সমন্বয়ে বহুমাত্রিক যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ)। ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে করা এ পরিকল্পনায় ২ হাজার ৭৪৯ কিলোমিটার সড়কপথ উন্নয়ন করা হবে। পাশাপাশি দুই দফায় ১ হাজার ৩২৭ কিলোমিটার জলপথও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বাস্থ্য অবকাঠামো হিসেবে নেয়া এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এসব অবকাঠামোতে সব মানুষের প্রবেশাধিকার থাকবে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিতে বিভিন্ন উদ্যোগ থাকবে।

ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর অনেক শহরেই কৃত্রিমভাবে নদী বা খাল তৈরি করা হয়েছে। সে বিবেচনায় আমরা ভাগ্যবান। ঢাকা শহরের আশপাশ দিয়ে চারটি নদী বয়ে চলেছে। শহরের ভেতর দিয়ে খালও প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু আমরা এসব নদী বা খালের সত্যিকার ব্যবহার করতে পারিনি। বিভিন্ন সময় এসব খাল-নদী ভরাট হয়ে গেছে। খসড়া ড্যাপে আমরা এসব নদী খাল ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছি। এসব নদী ও খাল ব্যবহার করে বহুমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারব।

 

তিনি বলেন, ধানমন্ডি লেক কেবল জলজ প্রাণের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এখন এটি একটি পাবলিক স্পেসও। এ লেক জীবনযাপনেরও অংশ হয়ে উঠেছে। এ লেককে ঘিরে অনেক অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্যতাও গড়ে উঠেছে। আমরা খসড়া ড্যাপে এ ধরনের লেক পার্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছি। এগুলোকে আমরা বলছি স্বাস্থ্য অবকাঠামোর অংশ হিসেবে। লোকজন লেক-পার্ক ঘিরে হাঁটবে।

ড্যাপের পরিকল্পনায় অবকাঠামো জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, বিদ্যমান সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২ হাজার ১৯৮ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার আর জলপথের দৈর্ঘ্য ৫৪৪ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার। বিদ্যমান রাস্তার কার্যকারিতার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনায় চার ধরনের রাস্তার শ্রেণীক্রমের প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় রাস্তা ছাড়া অন্য রাস্তাকে নগরজীবন রেখায় বিবেচনা করা হয়েছে। সংগতিপূর্ণ নগরজীবন রেখা বাস্তবায়নের জন্য গণপরিবহন, পথচারী, অযান্ত্রিক বাহন ব্যবহারকারীদের প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনায় রাস্তার দুই পাশে ২০ ফুট পরপর একসারি করে ৫০ ভাগ ফলের গাছ, ২৫ ভাগ ঔষধি গাছ ও ২৫ ভাগ কাঠের গাছ লাগানোর কথা বলা হয়েছে।

 

ড্যাপে বিভিন্ন অঞ্চলে জলকেন্দ্রিক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। ঢাকার ওপর চাপ কমিয়ে সুষম উন্নয়নে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্ব জোনিং করা হয়। ঢাকা শহরের বিদ্যমান জনসংখ্যার অনুপাতে স্কুল-কলেজ, খেলার মাঠ, পার্ক, পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সংকট রয়েছে। এ সমস্যা নিরসনে রিভাইজড ডিটেইলড প্ল্যানের প্রস্তাব এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলোকে উদ্ধারের বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। ৫৪৪ দশমিক ৬৪ কিলোমিটার নৌপথের নাব্য ফিরিয়ে আনতে রাজউক অঞ্চলের সব খাল ও নদ-নদী দখলমুক্ত এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে। নৌপথের উন্নয়নের ফলে সড়কপথের ওপর চাপ কমবে, দেশীয় মাছ ও জলজ উদ্ভিদের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে, যা জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, প্রস্তাবিত ড্যাপে নগর পরিকল্পনার অনেক আধুনিক ধারণার অনুশীলন করায় স্বাগত জানাই। পরিকল্পনায় পথচারীবান্ধব অবকাঠামো তৈরি ও বাইসাইকেল লেনকে উৎসাহিত করা এবং অযান্ত্রিক পরিবহনকে সামগ্রিক পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় করার মতো বিষয় জোরালোভাবে এসেছে। দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের শহরে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি, মানসম্পন্ন শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া গেলে ঢাকার ওপর স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাপ কমে আসবে।

Comment As:

Comment (0)