•   Wednesday, 02 Jul, 2025
বিদ্যুৎ করিডোর ভারত বাংলাদেশ

ঝুঁকি বিবেচনায় ভারতকে বিদ্যুৎ করিডোর দেবে না বাংলাদেশ

Generic placeholder image
  প্রকৌশল সমাচার অনলাইন

ভারতের প্রস্তাবিত ১১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ করিডোর প্রকল্প বাতিল করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে চলতি বছর প্রকল্প শুরু করে ২০২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য বলা হচ্ছে। তবে গ্রিড নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ প্রকল্পটি পুনর্বিবেচনা করছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের বোরানগর থেকে বিহারের কাটিহার পর্যন্ত বিদ্যুৎ ৭৬৫ কেভি (কিলোভোল্ট) সঞ্চালন লাইন যাবে। বিনিময়ে ভারত বাংলাদেশকে অতিরিক্ত এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য থেকে ভারতের অন্য অংশে বিদ্যুৎ নিতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সঞ্চালন লাইন নির্মাণে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছে দিল্লি। ২০২৩ সালের মে মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা-সংক্রান্ত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এ বিষয়ে দুই দেশের সঞ্চালন সংস্থার অংশীদারিত্বে একটি সিদ্ধান্ত হয়। যৌথ কোম্পানি প্রস্তাবিত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে। এ বিষয়ে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সমীক্ষাও সম্পন্ন করে। কয়েকটি প্রস্তাবিত রুটের মধ্যে বোরনগর-পার্বতীপুর-কাটিহার রুটটি চূড়ান্ত হয়। পিজিসিবিসহ বিদ্যুৎ বিভাগের অনেক প্রকৌশলী এই লাইনের বিষয়ে বিরোধিতা করলেও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত-ঘেঁষা নীতি প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রকল্পটি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয়।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটির অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে গ্রিড সংযুক্তি। বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎ ভিন্ন মানের দুই গ্রিড একীভূত হলে একটি দেশের বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব অপর দেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন প্রকৌশলীরা। ভারতে কোনো কারণে ‘ব্ল্যাকআউট’ হলে তার তাৎক্ষণিক প্রভাব বাংলাদেশে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
আবার আর্থিক দিক থেকেও এটি দেশের জন্য বাড়তি বোঝা তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিপরীতে বাংলাদেশকে ২.১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। নতুন এই প্রকল্প হাতে নিলে তাতে বৈদেশিক ঋণ আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগ।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বর্তমানে প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াট, যেখানে সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট। এ বাস্তবতায় ২০৩০ সালের আগে অতিরিক্ত বিদ্যুতের প্রয়োজন নেই। তাই মাত্র এক হাজার বিদ্যুতের জন্য ঋণ নিয়ে আরেক দেশের জন্য সঞ্চালন লাইন নির্মাণের যৌক্তিকতা দেখছেন না তারা। 
সংশ্লিষ্টদের মতে, সবচেয়ে গুরুতর শঙ্কা হলো পরিবেশগত বিপর্যয়। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটি যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ আনবে, তা নির্মিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র নদের ভারতীয় অংশে। এই নদীই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলোর উৎস ধারা। ভারতে বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, নদীভাঙন বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস এবং কৃষিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ ও জ্বালানি বিশ্লেষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সমকালকে বলেন, মাত্র এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের জন্য বিপুল আর্থিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি নেওয়া অনুচিত। আমাদের আগের অনেক বিদ্যুৎ চুক্তিই হয়েছে গোপনীয়তার মধ্যে, সেখানে জনস্বার্থের দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। তাই বর্তমানে প্রকল্প অনুমোদনের আগে পূর্ণ স্বচ্ছতা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, বিদ্যুৎ করিডোরের বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা ও পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন স্থাপনের আগে অবশ্যই জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। 

Comment As:

Comment (0)