•   Thursday, 19 Sep, 2024
গ্যাস অনুসন্ধান গ্যাস উত্তোলন

সিলেট- ভোলার ১০ কূপের কাজ পাচ্ছে চীন-রাশিয়া

Generic placeholder image
  প্রকৌশল সমাচার অনলাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আমদানির ওপর চাপ কমাতে সরকার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দিয়েছে। চলছে স্থলভাগে ৪৬টি কূপ খননের কাজ। আরও ১০০ কূপ খনন করা হবে। দেশি কোম্পানি বাপেক্সের পাশাপাশি বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দিচ্ছে সরকার।

চীনের সিনোপ্যাককে সিলেট গ্যাসক্ষেত্রের পাঁচটি ও রাশিয়ার গ্যাজপ্রমকে ভোলায় পাঁচটি কূপ খননের কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ বিধানে এই কাজ তাদের দেওয়া হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়। এতে ব্যয় হতে পারে ২০ মিলিয়ন ডলার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রম এরই মধ্যে তাদের প্রস্তাব দাখিল করেছে। তাদের দর প্রস্তাব নিয়ে দর কষাকষি করছে জ্বালানি বিভাগ। বিশেষজ্ঞ কেউ কেউ বলছেন, বিদেশি কোম্পানির চেয়ে বাপেক্সের কূপ খনন খরচ কম। তা ছাড়া দর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ দিলে প্রতিযোগিতা হতো, খরচ কমে আসত। তবে জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছে তা শুধু বাপেক্সকে দিয়ে সম্ভব নয়। দ্রুত কাজ করতে হবে। তাই বিশেষ বিধানে সমঝোতার মাধ্যমে সিনোপ্যাক ও গ্যাজপ্রমকে কাজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। দুটিই যোগ্য কোম্পানি। আগেও তারা বাংলাদেশে কাজ করেছে।  

গ্যাজপ্রমকে দেওয়া হবে ভোলার শাহবাজপুর-৫, শাহবাজপুর-৭, শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট-১ এবং ভোলা নর্থ-৩ ও ভোলা নর্থ-৪ কূপের কাজ। এর মধ্যে শাহবাজপুর নর্থ-ইস্ট অনুসন্ধান কূপ এবং বাকি চারটি উন্নয়ন কূপ। সিনোপ্যাক খনন করবে রশিদপুর-১১, রশিদপুর-১৩, সিলেট-১১, কৈলাসটিলা-৯ এবং ঢুপিটিলা-১ কূপ। এগুলোর ৪টি অনুসন্ধান ও একটি উন্নয়ন কূপ। 

এর আগে, ঘাটতি মেটাতে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার ৪৮টি কূপ খননের পরিকল্পনা করে। এর মাধ্যমে দৈনিক ৬১.৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ বাড়ার আশা করা হয়। ২০২৫ সাল আসতে আর এক বছর বাকি; কিন্তু এ পর্যন্ত কূপ খনন হয়েছে ১১টি। এর মধ্যে একটি কূপ শুষ্ক পাওয়া যায়। একটির গ্যাস উত্তোলন বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক নয়। বাকি কূপগুলো থেকে দিনে ১২.৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সক্ষমতা বেড়েছে। তবে পাইপলাইনে যোগ হয়েছে মাত্র চার কোটি ঘনফুট। এখন তিন কূপের ওয়ার্কওভার কাজ চলছে। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা ২০২৮ সালের মধ্যে আরও ১০০ কূপ খননের নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে। এর মধ্যে বাপেক্স ৬৮টি, সিলেট গ্যাসফিল্ড ১১টি ও বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড ২১টি কূপ খনন করবে। এর মধ্যে নতুন কূপ হবে ৬৯টি, বাকিগুলো বন্ধ কূপ যা সংস্কার করা হবে।

বাপেক্সের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নিজস্ব লোকবল দিয়ে একটি কূপ খনন করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ৮০ কোটি টাকা। অন্যদিকে গ্যাজপ্রমকে দিয়ে খনন করতে খরচ হয় ১৮০ কোটি টাকার মতো। ২০২০ সালে তিনটি কূপ খননের জন্য গ্যাজপ্রমকে দিতে হয়েছে ৫৪০ কোটি টাকা। সিনোপ্যাকের খরচ কূপপ্রতি ১৬০ থেকে ১৭০ কোটি টাকা। গ্যাজপ্রম ২০১২ সালে ১০টি গ্যাসকূপ খননের ঠিকাদারি নেয়। কোম্পানিটির খনন করা তিতাস-২০, তিতাস-২১, সেমুতাং-৬, বেগমগঞ্জ-৩ ও শাহবাজপুর-৪ কূপে গ্যাস উত্তোলন শুরুর অল্প দিনের মধ্যে বালু ও পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। পরে বাপেক্স সেগুলো সংস্কার করে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাপেক্সের যা সক্ষমতা তা দিয়ে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কূপ খননের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের লক্ষ্য আরও বড়। তাই বিদেশি কোম্পানিকে কাজ দেওয়া হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাপেক্স যে কাজ করে, তাতে কর্মকর্তাদের বেতন, রিগের পেছনে বিনিয়োগ ও অন্যান্য ব্যয় হিসাব করা হয় না। কিন্তু বিদেশি কোম্পানি সবকিছু হিসাব করে বাজেট করে। তাই খরচ বেশি।’  

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির টাকা থেকে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল করা হয়েছিল দেশি কোম্পানির সক্ষমতা বাড়িয়ে দেশের গ্যাস খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু দরপত্র ছাড়া বিশেষ আইনে বিদেশি কোম্পানিকে বেশি দামে কাজ দিয়ে তহবিলের বারোটা বাজিয়েছে সরকার। ব্যক্তি বিশেষের সুবিধার জন্য দেশি কোম্পানি বাপেক্সকে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে না।’

সুত্র: সমকাল

Comment As:

Comment (0)