•   Saturday, 23 Nov, 2024
online

অনলাইন প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না, ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বহু মানুষ

Generic placeholder image
  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশেষ প্রতিবেদক : দেশব্যাপী ইন্টরনেটের প্রসারের কারণে মানুষের অনলাইন নির্ভরতা বেড়েছেপাশাপাশি বেড়েছে ই-কমার্সের জনপ্রিয়তাও। ফলে অনলাইনভিত্তিক কেনাকাটার বিভিন্ন সাইটে গিয়ে নানামুখী ফাঁদের খপ্পরে পড়ছেন ক্রেতারা। অযৌক্তিক দামগোপন মূল্যবাড়তি চার্জভুয়া রিভিউমিথ্যা তথ্য ও তথ্য-প্রযুক্তির প্যাঁচে পড়ার কথা জানায় অনেক ক্রেতা। প্রতিনিয়তইই অনলাইনে বেচাকেনা নিয়ে প্রতারণার খবর পাওয়া যায়। সুযোগ সন্ধানী সাইটগুলো এমন সব পণ্যকে লক্ষ্যবস্তু বানায়যেগুলো সচরাচর ক্রেতারা অনলাইনে খোঁজ করে। অনেকেই সার্চ দিয়ে এসব সাইটের চটকদার তথ্য দেখে ভেতরে ঢুকেন। সেখানে পণ্যের প্রশংসা সুলভ মন্তব্য দেখে পণ্য কেনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে। অর্ডার করার সময় বিভিন্ন চার্জের নামে নির্ধারিত দামের সঙ্গে বাড়তি মূল্য যোগ হয়। এছাড়া একটি পণ্য অর্ডার করে অন্য পণ্য পাওয়া বা নষ্ট জিনিস পাওয়ার বিড়ম্বনা তো রয়েছেই। তবে কেনাকাটা ছাড়াও অনলাইনে রয়েছে লোভনীয় অনেক ফাঁদ। তিন থেকে ছয় মাসেই বিনিয়োগের টাকা দ্বিগুণ হবে কিংবা বিশেষ ছাড়ে প্রায় অর্ধেক মূল্যে দেওয়া হচ্ছে পণ্য- এরকম লোভনীয় অফার দেওয়া হয় অনলাইনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমনিজস্ব ওয়েবসাইট বা নানা অ্যাপ ব্যবহার করে চলে এরকম প্রচারণা। প্রলোভনে পড়ে প্রতারকদের ফাঁদে পা বাড়ান সরল মনের অনেকেই। প্রথম দিকে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য গ্রাহকদের বিনিয়োগের অর্থ ফেরত দেওয়া হয়। অর্ধেক দামে পণ্য পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রাহকদের ঘরে। এরপর সেই গ্রাহকদের দিয়েই প্রচারণা শুরু করে প্রতারক চক্রগুলো। ব্যবসা জমজমাট হয়ে গেলেই শুরু হয় টালবাহানা। বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পেতে ধরনা দিতে হয় গ্রাহকদের। মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও পাওয়া যায় না অর্ধেক দামের সেই পণ্য। এর মাঝে চম্পট দেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেনএকসময়ে যুবকডেসটিনি বা ইউনিপেটুইউ নামে এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি সাধারণ মানুষকে প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করেছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে প্রতারকরা কৌশল পাল্টেছে। সারা দুনিয়ায় ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এখানে প্রতারক চক্রগুলো ই-কমার্সের নামে প্রতারণা শুরু করেছে। আর পিরামিড স্কিম বা এমএলএমের নামেও প্রতারণা চলছে অনলাইনে। বিভিন্ন অ্যাপ বানিয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ লভ্যাংশ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগ লুটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে প্রতারকরা। সংশ্লিষ্টরা জানানঅনলাইনে প্রতারণায় শীর্ষে রয়েছে ই-কমার্স ও এমএলএম কোম্পানি। করোনার সময় প্রথম ই-কমার্সের নামে প্রতারণার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে। দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-ভ্যালির প্রতারণা নিয়ে একাধিক সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর একে একে ধামাকা শপিংআলেশা মার্টই-অরেঞ্জসিরাজগঞ্জ শপআলাদিনের প্রদীপবুমবুমআদিয়ান মার্টনিড ডট কমকিউকমরিংআইডিদালাল প্লাসএসপিসি ওয়ার্ল্ডমাইক্রোট্রেডর‌্যাপিড ক্যাশনিরাপদ শপআলিফ ওয়ার্ল্ডজিকো বাজার গ্লোবাল গেইনএমাসবিডিআনন্দবাজার২৪টিকিটফাল্গুন শপবিডিসহ শতাধিক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বেশিরভাগ মামলার তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির এক কর্মকর্তা জানানই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলার পাশাপাশি অনেকগুলোর বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনেও মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের কাজ হলো মামলার তদন্ত শেষে তথ্য-প্রমাণসহ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া। গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়টি আদালত বা সরকারের অন্য সংস্থা করতে পারে। অনলাইনে অবৈধ লেনদেন প্রতিরোধে একটি টাস্কফোর্স রয়েছে। কিন্তু সেটির কোনো কার্যকারিতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানানঅনলাইনে অবৈধভাবে আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি বিআইএফইউ নিয়মিত নজরদারি করে। প্রতিমাসেই শতাধিক প্রতিবেদন বা অপরাধ বা অপরাধীদের তথ্য-উপাত্ত বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়। এর পরের ধাপের কাজ আসলে অন্য সংস্থার। কোনো ওয়েবসাইট বা অ্যাপ বন্ধ বা কাউকে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা নেই বিএফআইইউ। ফলে এটি সমন্বিতভাবে না করলে অনলাইন স্ক্যাম বন্ধ করা যাবে না। বিএফআইইউর ওই কর্মকর্তা বলেনআমরা নজরদারির পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার কাছে নিয়মিত চিঠি পাঠাই। গোয়েন্দা নজরদারি ও আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে না পারলে এটি বন্ধ করা যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেনঅনলাইন স্ক্যাম বন্ধ করতে না পারার জন্য একক কোনো সংস্থাকে দায়ী করা যাবে না। প্রত্যেক সংস্থাকে এক হয়ে কাজ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। আইসিটি বিভাগ এককভাবে বা সরকার চাইলেই বন্ধ করতে পারবে না। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সবাই একযোগে কাজ করলে সাইবার স্পেস বা অনলাইন নিরাপদ করা যাবে

 

ON LINE
Comment As:

Comment (0)