আদেশ ছাড়াই অফিস করছেন বরখাস্ত প্রকৌশলী, যা বললেন প্রশাসক
দুর্নীতি, প্রভাব খাটানো, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারসহ বিস্তর অভিযোগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বরখাস্তের আদেশে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগে গুরুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের কথা বলা হলেও গত সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল করে আশিকুর রহমানকে চেয়ারে বসান। জানান ফুলেল সংবর্ধনা। নগর কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো আদেশ না পেলেও বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তা নিয়মিত অফিস করছেন। আলোচিত এই প্রকৌশলীর বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএসসিসির প্রশাসক মুহ. শের আলী। বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) নগর ভবনে এক মতবিনিময় সভা শেষে তিনি বলেন, আমি যতদূর শুনেছি, তার সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি আদালত সাময়িক স্থগিত করেছেন। আদালতের আদেশ প্রতিপালন করতে আমরা সবাই বাধ্য। আমরা এখানো আদালতের আদেশটি পাইনি। আপনারা জানেন, যিনি কনসার্ন ব্যক্তি তিনি আদালতের আদেশটি দ্রুত সংগ্রহ করে তার সাথে রাখেন। আর আদালত থেকে সংশ্লিষ্ট আদেশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা সংস্থায় অফিসিয়ালি আসতে একটু সময় লাগে। আমরা দ্রুতই আদেশ পেয়ে যাব। আদেশটি পেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
আদালতের আদেশ দাপ্তরিকভাবে আপনাদের কাছে না আসা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কীভাবে এখনো অফিস করছেন এবং এ ধরনের কার্যক্রমকে পেশিশক্তির ব্যবহার মনে করেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএসসিসি প্রশাসক বলেন, সকল ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ও একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের ছাত্র-জনতা অনেক রক্ত দিয়েছে। আপনার, আমার, সবার মাঝে একটি বড় প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রত্যাশা পূরণে কোনো জায়গায় কোনো অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা থাকলে আমরা নিয়মের মাধ্যমেই সেসব মোকাবিলা করব।
দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, আশিকুর রহমান ১৯৯৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসসিসিতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০০১ সালে নির্বাহী প্রকৌশলী ও ২০১৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান। ২০১৫ সালে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোলসংক্রান্ত একটি ঘটনায় আশিকুর রহমানকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে সরিয়ে নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তখন তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পরে ২০২১ সালের ৭ জুন আবার তাকে নগর ভবনে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেন সাবেক মেয়র শেখ তাপস। ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ১৪ আগস্ট ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাসের সময়ে চাকরি শুরু করেন প্রকৌশলী আশিকুর। এরপর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন এবং সবশেষ ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস- সব আমলেই আশিকুর ছিলেন দুধের মাছি। তিনি এতটাই কৌশলী যে সরকার বদলায়, মেয়র বদলায় কিন্তু আশিকুর বদলান না। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ ও বরখাস্তের পরও থেকে যান স্বপদে-স্বমহিমায়।