আলোর মুখ দেখলো সব মেগা প্রকল্প
 
                                         
 
                                        প্রকৌশল সমাচার প্রতিবেদন: উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন বিশ^ অর্থনীতিতে দৃষ্টান্ত হিসাবে বিবেচিত । বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজেদের সক্ষমতার কথাও জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সড়ক যোগাযোগ, জ¦ালানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে যে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে, তা এক কথায় অসাধারণ ও অভূতপূর্ব। বর্তমান সরকারের দূরদর্শিতায় পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, সড়ক ও মহাসড়ক, সেতু, রেলসংযোগ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনসহ কয়েক ডজন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে ও হচ্ছে। সবগুলো মেগা প্রকল্পই একদিকে যেমন সময়ের বাস্তবতা, অন্যদিকে সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকারও ছিল। শুরু থেকেই নানামুখী চ্যালেঞ্জ ও সমালোচনা মোকাবেলা করেই আলোরমুখ দেখছে প্রকল্পগুলো। টেকসই সামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনে সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি করেছে মেগা প্রকল্পগুলো। নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্রও সৃষ্টি হয়েছে।
পদ্মাসেতু: নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে স্বগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। প্রমত্তা পদ্মার বুকে বহুমুখী এই সেতু দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আজীবন লালিত স্বপ্ন। যোগাযোগ ও অর্থনীতিসহ উন্নয়নের মূল ধারায় সংযোগ ঘটিয়েছে পদ্মাসেতু।  খর¯্রােতা নদীর বুকে এমন দীর্ঘ সেতু নির্মাণে ইঞ্জিনিয়ারিং  চ্যালেঞ্জের  চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয় রাজনৈতিক চাপ। প্রকল্পের শুরু থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়েছে সরকারকে। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন  থেকে সরে দাড়ায় বিশ্বব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় শেষতক নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়ন হয় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো। গত বছরের ২৫ জুন উদ্বাধন হয় পদ্মা সেতু প্রকল্পের।
পদ্মা বহুমুখী রেল সেতু: প্রমত্তা পদ্মার ওপর দিয়ে সড়ক যোগাযোগ চালুর ১৫ মাসের ব্যবধানে চালু হয় রেল সেতু। এর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরের মানুষ প্রথমবারের মতো রেল  যোগাযোগের আওতায় এসেছে। ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার রেলসংযোগ প্রকল্পের প্রথম দফায় ঢাকা থেকে মাওয়া-ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 
মেট্রোরেল: নগরীর বুকে আধুনিক যোগাযোগের অপর নাম মেট্রোরেল। যানজটের নগরীতে স্বস্তিদায়ক  ভ্রমণ নিশ্চিত করছে এই মেট্রোরেল। এতোদিন রাজধানীর একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হতো সেখানে উত্তরা থেকে মতিঝিলে যেতে সময় লাগছে মাত্র আধাঘন্টা। এ স্বপ্ন যাত্রার শুরু হয়েছিল ২৮ ডিসেম্বর। ৪ নভেম্বর থেকে মতিঝিল অংশে চলাচল শুরুর মধ্যদিয়ে সেই স্বপ্ন যাত্রার পূর্ণতা পেয়েছে। এমআরটি-৬ প্রকল্পের পর কাজ শুরু হচ্ছে এমআরটি-৫ প্রকল্পেরও। এটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকার আরেক প্রান্ত আশুলিয়ার হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর-গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত দ্রুতগতির যাতায়াত করতে পারবে নগরবাসী। এই প্রকল্পনিয়েও আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। ছিল নানামুখী চ্যালেঞ্জও। 
শতভাগ বিদ্যুতায়ণ: বর্তমান সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ ছিল সারাদেশে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া। দেশের কৃষি-শিল্প, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ অর্থনীতির সব ক্ষেত্রেই নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ অপরিহার্য। সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনসহ এই খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নানা কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। রামপাল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে।  বর্তমানে দেশে ক্যাপটিভ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৭ হাজার ৩৬১ মেগাওয়াট। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট। যা ২০০৮ সালে ছিল ৪ হাজার ৯৪২  মেগাওয়াট ও প্রকৃত উৎপাদন ছিল ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদন মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা হবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প : পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ  কেন্দ্রের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভৌতকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে। এখন চলছে কমিশনিং। তিনটি পৃথক সঞ্চালন লাইন নির্মাণ কাজও শেষের দিকে। ইতোমধ্যেই জ¦ালানীর প্রধান উপকরণ ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ বা ইউরেনিয়ামের ৬টি চালান এসেছে প্রকল্পে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ২ হাজার ৪শ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যয়ের প্রকল্প পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে।
বাংলাদেশের বড় ও ছোট প্রকল্পগুলো দেশের অর্থনীতিকে টানা ১২-১৫ বছর  ধরে জিডিপি গ্রোথ  রেট ৬% এর ওপর ধরে রাখতে সাহায্য করেছে। রোডস এন্ড হাইওয়ে, এলজিইডি , সড়ক কালভার্ট প্রত্যন্ত গ্রামে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরি করে অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে। বঙ্গবন্ধু সেতু উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর করতে সাহায্য করেছে। পদ্মা সেতু জিডিপির প্রবৃদ্ধির  রেটকে ১.৩ শতাংশ বাড়িয়ে নেবে বলে সমীক্ষায় উঠে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা, সময় ও অর্থ সাশ্রয় করে এটি মুদ্রাস্ফীতি রোধ করবে এবং জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা পালন করবে। দক্ষিণবঙ্গের ২১ জেলার ভাগ্য পরিবর্তন করবে। সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা খ্যাত ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ বাস্তবায়নের কাজও এগিয়ে চলছে। মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে দ্রুত এর কাজ এগিয়ে নিতে সমন্বিত  চেষ্টা প্রয়োজন।
 
 
                                    


 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                